ধর্মান্ধতা কী?
ইংরেজি একটা শব্দ fanatic
(ফ্যানাটিক)। ফ্যানাটিকের বাংলা ধর্মান্ধ। কিন্তু আমার মনে হয় ফ্যানাটিকের সঠিক
অনুবাদ ধর্মান্ধ নয়। কেননা ইংরেজি ফ্যানাটিক শব্দের আগে একটি নির্দেশকের প্রয়োজন
হয়। যেমন religious
fanatic, Christian fanatic, Islamic fanatic, democratic fanatic, communist
fanatic, white supremacy fanatic, ইত্যাদি। কিন্তু বাংলায় ধর্মান্ধ হচ্ছে ধর্ম + অন্ধ সমাসের ফলে ধর্মান্ধ। কাজেই বাংলায় ধর্মান্ধ বলতে সাধারণত শুধু ধর্মের সাথে
সম্পর্কিত বুঝায়।
আমার এই লেখার জন্য যেহেতু ধর্মান্ধ শব্দকেই ব্যবহার করতে
হবে সেহেতু আমি ধর্মান্ধ শব্দকে প্রসারিত করে ব্যবহার করব। অর্থাৎ ধর্ম ছাড়াও অন্য
ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হবে।
ধর্মীয় ধর্মান্ধ ছাড়া আমরা অনেক রকম ধর্মান্ধ দেখতে পাই।
যেমন কম্যুনিস্ট ধর্মান্ধ;
গণতান্ত্রিক ধর্মান্ধ,
মুক্ত বাণিজ্য বিশ্বাসী ধর্মান্ধ,
সরকারের ক্ষমতা সীমিতকরণে বিশ্বাসী ধর্মান্ধ, জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী ধর্মান্ধ, কোন একটি দেশকে ঘৃণা প্রসুত ধর্মান্ধতা, ইত্যাদি।
ধর্মান্ধ হবার কারণ হচ্ছে যে সে যেটা বিশ্বাস করে তার
বিপক্ষে শত যুক্তি থাকার বা দেখানোর পরেও তাকে তার বিশ্বাস থেকে এক বিন্দুও নড়ানো
যায় না। কিন্তু যারা ধর্মান্ধ তারা বুঝতে পারে না যে তাদের এই দৃঢ় বিশ্বাস আসলে
ধর্মান্ধতা।
ধর্মান্ধতার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যুক্তিহীন বিশ্বাস। অনেকে মনে
করতে পারেন যে শুধু অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিতরাই ধর্মান্ধ হয়। কিন্তু কথাটা
মনে হয় ঠিক না। কেননা আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিভিন্ন বিষয়ে অনেক প্রথাগত শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত ধর্মান্ধ
লোকদের চিনি। ধর্মান্ধ
লোকেরা সব নিরপেক্ষ সংবাদকে ধর্মান্ধতার-চশমা দিয়ে দেখে--হয় তাদের
সপক্ষে অথবা বিপক্ষে বলে মনে করে। তাদের মতবাদের সপক্ষে হলে প্রচণ্ড উৎসাহে তা প্রচার করে। বিপক্ষে হলে
হয় খবরটাকে অবজ্ঞা করে অথবা চরম বিরোধিতা করে অথবা বিরুদ্ধে তাদের যুক্তি দেখায়।
ধর্মান্ধতার প্রধান কারণ—কিন্তু একমাত্র নয়-জন্মের পর থেকে কোনো বিশেষ মতবাদে পিতা মাতা অথবা সমাজ দ্বারা এমন জোরালোও
ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয় যে শিশুটি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন এই
বিশেষ মতবাদ এত দৃঢ় ও গভীর ভাবে আঁকড়ে বসে যে কোনো যুক্তি, প্রমান,
উদাহরণ, ইত্যাদি তার বিশ্বাস থেকে টলাতে পারে না।
ধর্মান্ধতার হচ্ছে যুক্তহীন বিশ্বাস। কী ভাবে এই যুক্তিহীন বিশ্বাস গড়ে ওঠে? এটা বিভিন্ন ভাবে গেঁড়ে বসতে পারে। পিতা মাতা ও সমাজের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। স্কুল, মাদ্রাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অথবা অন্য কোন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গুরু, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক দল, মৌল্বাবাদি দিক্ষা, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, বা অন্য উপাসনার স্থান, ধর্ম প্রচারকের প্রভাব, ইত্যদির প্রভাবে ধর্মন্ধতার সৃষ্টি হতে পারে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন